খাদ্য ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের নিরাপদ খাবার বিষয়ক প্রাথমিক ধারণা শীর্ষক প্রশিক্ষণের প্রতিবেদন
স্থানঃ মুক্তিযোদ্ধা কনভেনশন সেন্টার, ডাচ বাংলা মোড়, রাজাপুর, ঝালকাঠি।
তারিখঃ ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ রোজ মঙ্গলবার ।
সময়ঃ সকাল ১০.০০ ঘটিকা।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা কার্যালয়, ঝালকাঠি কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধা কনভেনশন সেন্টার, ডাচ বাংলা মোড়, রাজাপুর, ঝালকাঠি এ খাদ্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ রোজ মঙ্গলবার সকাল ১০.০০ ঘটিকায় জনগণের নিরাপদ খাবার প্রাপ্তি নিশ্চিত কল্পে খাদ্য ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের নিরাপদ খাবার প্রস্তুতি ও পরিবেশন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা কার্যালয় ঝালকাঠি এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উক্ত প্রশিক্ষণে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোহাম্মদ ইয়াছিন, নিরাপদ খাদ্য অফিসার, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঝালকাঠি। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মো.সেলিম মিয়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক, রাজাপুর, ঝালকাঠি।
রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের খাদ্যকর্মী ও খাদ্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়। খাদ্য ব্যবসায়ী ও কর্মীদের আগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। প্রশিক্ষণের শুরুতেই জনাব মোহাম্মদ ইয়াছিন, উপস্থিত সকলের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত খাদ্য নিরাপদতা বিষয়ক তথ্যবহুল পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে খাদ্য নিরাপদতার বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন।
আলোচ্য বিষয় সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
খাদ্য নিরাপদতা
খাদ্য নিরাপদতা হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মতভাবে গৃহীত এক বা একাধিক পদক্ষেপ যা ভোক্তার জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাদ্যের বিভিন্ন বিপত্তি হতে খাদ্যকে রক্ষা করে।
খাদ্য নিরাপদতা কেন জরুরী
খাদ্য অনিরাপদ হলে কী ক্ষতি হয়?
খাদ্য ব্যবসার ক্ষেত্রে-
সুনাম নষ্ট হয়
আর্থিক ক্ষতি হয়
আইনি জটিলতা এবং জরিমানা
ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়
ভোক্তা/ অর্থনীতির ক্ষেত্রে-
প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়
কর্মস্থলে অনুপস্থিতি
দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে যায়
চিরতরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও মৃত্যু ঘটে
কেন খাদ্য দূষিত হয়?
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য প্রস্তুত করলে
নোংরা হাত ও নোংরা তৈজসপত্র ব্যবহার করলে
পশু, পাখি, ইঁদুর, পোকামাকড় ও মাছির সংস্পর্শে আসলে
সঠিক তাপমাত্রায় খাবার রান্না না করলে
সঠিক পদ্ধতিতে ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদি পরিস্কার না করলে
নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করলে
ময়লা-আবর্জনা, বাতাস ও ধুলাবালির সংস্পর্শে আসলে
খাদ্য দূষক/ খাদ্য বিপত্তি কী?
খাদ্যকে দূষিত করতে পারে তথা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্যস্থিত যেকোন কিছুকে খাদ্য দূষক/ খাদ্য বিপত্তি বলা হয়।
খাদ্য দূষক প্রধানত তিন প্রকার-
অণুজীবঘটিত খাদ্য বিপত্তি; যেমন- ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি
ভৌত খাদ্য বিপত্তি; যেমন- চুল, ভাঙ্গা কাঁচ, ধূলাবালি ইত্যাদি
রাসায়নিক খাদ্য বিপত্তি; যেমন- বালাইনাশক, হেভি মেটাল, অননুমোদিত খাবার রঙ, পরিস্কার-পরিচ্ছনতার কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক ইত্যাদি
অণুজীবঘটিত খাদ্য দূষণের উৎস-
অণুজীবঘটিত খাদ্যবিপত্তির মধ্যে খাদ্য সবচেয়ে দূষিত হয় ব্যাকটেরিয়া এর মাধ্যমে। প্রতি ৬ ঘন্টায় ১ টি ব্যকটেরিয়া হতে কমপক্ষে ২,৬২,১৪৪ টি ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা ফুড পয়জনিং এর জন্য যথেষ্ট। তেলাপোকা, ইঁদুর, পোকামাকড়, পোষা প্রাণী, নোংরা পানি, হাত এবং তৈজসপত্র, সঠিক তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ / রান্না না করা;একই চপিং বোর্ড মাছ, মাংস ও সবজির ক্ষেত্রে ব্যবহার;খাবার পরিবেশনের জায়গা অপরিষ্কার; রেফ্রিজারেটরে খোলা অবস্থায় খাদ্য ও খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ; খাদ্য কর্মীদের অপরিচ্ছন্ন পোষাক ও স্বাস্থ্যবিধি ।
খাদ্যস্থাপনায় অবস্থান, খাদ্য প্রস্তুতকরণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিবেশনের সময় বর্জনীয় বিষয়সমূহ
ধুমপান
চুইংগাম চিবানো
অপরিষ্কার নখ
অপরিষ্কার পোশাক পরিধান
অসুস্থকর্মী কর্তৃক খাদ্য নাড়াচাড়া
গ্লাভস ছাড়া খাবার প্রস্তুত
খাদ্যস্থাপনায় অবস্থান, খাদ্য প্রস্তুতকরণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিবেশনের সময় করণীয় বিষয়সমূহ
আঙুলের নখ ছোট, পলিশবিহীন ও পরিষ্কার রাখুন। কোন কৃত্রিম নখ খাদ্য প্রস্তুত এলাকায় ব্যাবহার করা যাবে না।
টয়লেট বা প্রক্ষালন কক্ষে যাওয়ার পূর্বে অথবা খাদ্য স্থাপনা ত্যাগ করার পূর্বে আপ্রন খুলে রাখুন।
অ্যাপ্রোন শুধুমাত্র কর্মস্থলে আসার পর হতে কর্মস্থল ত্যাগের পুর্ব পর্যন্ত পরিধান করুন।
খাবার পরিবেশনের সময়
কাজের বিরতিতে গ্লাভস পরিবর্তন করুন বা যদি কাজটি দীর্ঘকালব্যাপী হয় তবে প্রতি ০৪ (চার) ঘন্টা পর তা পরিবর্তন করুন।
গ্লাভস পরার পুর্বে এবং গ্লাভস খোলার পর হাত ধৌত করুন।
গ্লাভস ফুলানো, ভাজ, ধৌত বা পুনঃব্যবহার করা যাবেনা।
খাদ্য আবর্জনা ও বর্জ্য
খাদ্য স্থাপনায় প্রক্রিয়াকরণ স্থানে বর্জ্য ও ব্যবহারের অনুপযোগী খাদ্য সংরক্ষণ করা যাবে না। খাদ্য বর্জ্য থেকে খাদ্য দূষণ এড়ানোর জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আবর্জনা নাড়াচাড়া করার পরে খাদ্যকর্মীকে অবশ্যই যথাযথভাবে হাত ধুতে হবে। বর্জ্য রাখার জন্য বাইরের ঝুড়ি মশা-মাছির বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী জায়গা।
এই কারণে ঝুড়িগুলোতে শক্তভাবে ঢাকনা আটকানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে করে ব্যবহারের পরে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা যায়।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় করণীয় ও বর্জনীয় করণীয় বিষয়সমূহ
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত একাধিক রাসায়নিক দ্রব্য একত্রে মেশানো।
পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ
সাধারণত খাদ্যের পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ হলো ইঁদুর, তেলাপোকা, মাছি, ভীমরুল, পিঁপড়া ও সংরক্ষিত খাদ্যে আরো অন্যান্য কীটপতঙ্গ।এছাড়া কবুতর, ঘুঘু, চড়ুই পাখি, কুকুর ও বিড়াল রোগজীবাণু ছড়ায়।
কীটপতঙ্গ-পোকামাকড়ের উপদ্রব প্রতিরোধে করণীয়
কীটপতঙ্গ-পোকামাকড় অথবা এসবের উপস্থিতির লক্ষণসমূহ, মশা-মাছি মারার বৈদ্যুতিক যন্ত্রের টিউব লাইটে ত্রুটি, ভাঙ্গা জানালা এবং ত্রুটিপূর্ণ নর্দমা দেখা মাত্র আপনার সুপারভাইজরকে রিপোর্ট করুন।
খাদ্য ঢেকে রাখুন।
বাহিরে আবর্জনা রাখার ঝুড়িতে ঢাকনা ব্যবহার করুন এবং আশে-পাশে পরিষ্কার রাখুন।
খাদ্য সরাসরি মেঝেতে রাখা যাবে না-মেঝে থেকে উপরে এবং দেয়াল থেকে দূরে রাখুন।
ইঁদুর মুক্ত রাখার জন্য খাদ্য পাত্রের ঢাকনা সব সময় বন্ধ রাখুন।
বিতরণ ও খালাস
মেয়াদোত্তীর্ণের বা উত্তম ভোগের সর্বোচ্চ তারিখ, কোড বা লট নম্বর এবং খাদ্যের অবস্থা ও গন্ধ অথবা ছত্রাক পড়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
কীটপতঙ্গ-পোকামাকড়ের উপস্থিতি পরীক্ষা করা।
খাদ্য স্থাপনার দেয়াল থেকে দূরে এবং মেঝে থেকে উঁচুতে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
দ্রুত পচনশীল বা স্বল্পমেয়াদী সংরক্ষণকাল সম্পন্ন খাদ্যপণ্য ফ্রিজে অথবা হিমাগারে রাখা হয় এবং লেবেলে অবশ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থাকবে। মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পরিবর্তন করে খাদ্য বিক্রয় করা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং আইনের পরিপন্থী।
দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণকাল সম্পন্ন খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে লেবেলে উত্তম ভোগের তারিখ (বেস্ট বিফর ডেট) দেয়া হয়। তবে, উল্লেখিত সময়ের পরেও খাদ্যপণ্যটির মান সন্তোষজনক থাকতে পারে, কিন্তু বিক্রয়যোগ্য থাকবে না।
জনাব মো.সেলিম মিয়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক, রাজাপুর, ঝালকাঠি প্রশিক্ষণে উপস্থিত সকল খাদ্যকর্মীদের নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ সম্পর্কে অবগত করেন এবং একই সাথে এ আইন প্রতিপালনে সকলকে অনুরোধ করেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS